সিস্টেম

এক ব্যাক্তি তার মালিকাধীন কোম্পানীতে কয়েকজন কর্মী নিয়ে ব্যবসা করতো। তার কর্মীরা সময় নষ্ট না পন্য উৎপাদন এবং বিক্রি করতো এবং দিনের শেষে এসে মালিককে কাজ বুঝিয়ে দিতো।

তারা যে পরিমাণ কাজ করত, তাতে কোম্পানির উৎপাদন এবং বিক্রি হতো তুলনামূলকভাবে প্রচুর এবং এর ফলে সবাই আনন্দের সঙ্গেই কাজ করতো এবং জীবন নির্বাহ করত।

কোম্পানীর মালিকের বন্ধু তাকে পরামর্শ দিলো কোনো ধরনের সুপারভিশন ছাড়াই প্রচুর কাজ হচ্ছে। যদি কারও সুপারভিশনে দেওয়া হয়, তাহলে তারা আরও বেশি উৎপাদন এবং বিক্রি হবে এবং মালিক বেশী লাভবান হবে।

কয়েক দিনের মধ্যেই কোম্পানীর মালিক একজন সিইও নিয়োগ দিল। সিইও এর ছিল দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা এবং সুনাম, আর সে দুর্দান্ত রিপোর্ট লিখতে পারত।

সিইও প্রথমেই সিদ্ধান্ত নিল, এই অফিসে একটি অ্যাটেনডেন্স সিস্টেম থাকা উচিত।

কয়েক দিনের মধ্যেই সিইও এর মনে হলো, তার একজন সেক্রেটারি দরকার, যে তাকে রিপোর্ট লিখতে সাহায্য করবে। সে একটা সেক্রেটারি নিয়োগ দিল যে কাজের সব অ্যাটেনডেন্স মনিটর করবে, আর নথিপত্র রাখবে।

কিছুদিনের মধ্যেই সিইও একটি কম্পিউটার ও লেজার প্রিন্টার প্রয়োজন হলো এবং এগুলো দেখভালের জন্য আইটি ডিপার্টমেন্ট গঠন করল এবং আইটি অফিসার নিয়োগ দিলো এবং সব রুমে সিসিটিভি সেট করলো।

কোম্পানীর মালিক খুব আনন্দ নিয়ে দেখল যে সিইও তাকে প্রতিদিনের কাজের হিসাব দিচ্ছে আর সেগুলো বিশ্লেষণ করছে গ্রাফের মাধ্যমে। ফলে খুব সহজেই উৎপাদন ওব বিক্রির ধারা সম্পর্কে ধারণা নেওয়া যাচ্ছে এবং সিইও সেগুলো বোর্ড মিটিংয়ে প্রেজেন্টেশন আকারে পেশ করে বাহবা পাচ্ছে।

কোম্পানীর কর্মীরা, যে প্রতিদিন অফিসে বা বাইরে প্রচুর কাজ করতো, আনন্দ করতো, অবসরে আড্ডা দিতো এবং দিন শেষে খুশি মনে বাসায় ফিরত, তাদেরকে এখন প্রচুর পেপার ওয়ার্ক করতে হয়, সপ্তাহের চার দিনই নানা মিটিংয়ে হাজিরা দিতে হয়।

নিত্যদিন এসব ঝামেলার কারণে কাজে ব্যাঘাত ঘটায় উৎপাদন এবং বিক্রি কমতে লাগল, আর কর্মীরা বিরক্ত হতে লাগল।

সিইও সিদ্ধান্ত নিল, কর্মীরা যে যে বিভাগে কাজ করে, সেটাকে আলাদা আলাদা ডিপার্টমেন্ট করে ডিপার্টমেন্ট প্রধান নিয়োগ দেওয়ার এটাই উপযুক্ত সময়।

সিইও সেলস এবং প্রোডাক্টশন ডিপার্টমেন্টের প্রধান হিসেবে দুইজনকে নিয়োগ দিল। দুই ডিপার্টমেন্টের প্রধান প্রথম দিন এসেই তাদের রুমের জন্য কার্পেট, চেয়ার, এসি ইত্যাদির অর্ডার দিল।

কয়েকদিনের মধ্যেই অফিসের জন্য স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান তৈরি করতে দুই ডিপার্টমেন্টের প্রাধানের কম্পিউটার ও ব্যক্তিগত সহকারীর প্রয়োজন হলো। কম্পিউটার নতুন কেনা হলেও ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে ডিপার্টমেন্টের প্রাধানদ্বয় নিজেদের পুরোনো অফিসের কলিগদেরকে নিয়োগের সুপারিশ করলো এবং সুপারিশ মোতাবেক তাদের নিয়োগ দেওয়া হলো।

কর্মীরা যেখানে কাজ করে, সেখানে আগে ছিল চমৎকার একটা পরিবেশ। এখন সেখানে কেউ কথা বলে না, হাসে না। সবাই খুব মনমরা হয়ে কাজ করে এবং বিরক্ত হয়ে বাসায় যায়।

সিইও কোম্পানীর পরিস্থিতি মালিকের কাছে রিপোর্ট আকারে পেশ করলো, কোম্পানীর মালিক রিপোর্ট পর্যালোচনা করে দেখতে পেল, উৎপাদন এবং বিক্রি আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে।

কাজেই কোম্পানীর মালিক কয়েক দিনের মধ্যেই স্বনামখ্যাত কনসালট্যান্ট বন্ধুকে উৎপাদন এবং বিক্রি বাড়ানোর উপায় বাতলে দেওয়ার জন্য নিয়োগ দিল।

কনসালট্যান্ট তিন মাস সেলস, প্রোডাক্টশন এবং অনান্য ডিপার্টমেন্ট মনিটর করল, সকল কর্মীদের সঙ্গে ওয়ান টু ওয়ান কথা বলল। তারপর বেশ মোটাসোটা একটা রিপোর্ট পেশ করল কোম্পানীর মালিকের কাছে। ঐ রিপোর্টের সারমর্ম হলো, এই অফিসে প্রয়োজনের তুলনায় কর্মী বেশি। কর্মী ছাঁটাই করা হোক।

পরের সপ্তাহেই কিছু সংখ্যক উৎপাদন এবং বিক্রি কর্মী ছাঁটাই করা হলো।

সংগৃহীত এবং অনুলিখিত (এস. এম. মেহেদী আকরাম)

মন্তব্য করুন

×
কপিরাইট © ২০০৬-২০২৪ সমকাল দর্পণ. সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
সার্বিক তত্ত্বাবধানে রয়েল টেকনোলজিস