মোবাইলে প্রতারণার নতুন কৌশল ‘স্পুফিং-Spoofing’

১। মনে করুন আপনি মাঠ পর্যায়ের চাকুরীজীবী, আপনাকে ফোনে বলল,”হ্যালো আমি এমডি/চেয়ারম্যান বলছি, দশ মিনিটের মধ্যে তোমার কাছে লোক যাচ্ছে তাকে xx টাকা দিয়ে দাও (কিংবা অন্য কোন ভাবে পাঠাতে)।” এমডি’র সাথে নিয়মিত কথা না হলেও তার নাম্বার আপনার মোবাইলে সেভ করা আছে এবং কলটি এসেছে সেই নাম্বার থেকেই! আপনি বিষয়টি নিশ্চিত হয়েই আদেশ পালন করলেন এবং পরে জানলেন এমডি আপনাকে ফোনই করেনি, বিষয়টি সম্পূর্ণ প্রতারণা!

২। আপনার স্বামী/স্ত্রীর মোবাইল থেকে আসা কলে অন্য কেউ বলল, “আপনার স্বামী/স্ত্রী মারাত্মক দুর্ঘটনায় অজ্ঞান, চিকিৎসার জন্য/হাসপাতালে নেয়ার জন্য xxx টাকা পাঠান।” আপনি কাল বিলম্ব না করে টাকা পাঠানোর পর আপনার স্বামী/স্ত্রী সুস্থ ভাবে বাসায় আসলে জানতে পারেন এ ধরনের কোন ঘটনাই ঘটেনি তবে ঐ একই সময়ে তাকে তার মোবাইল কোম্পানি থেকে ফোন করে সিস্টেম আপগ্রেডের জন্য কিছুক্ষণ মোবাইল বন্ধ রাখতে বলেছিল যাতে ব্যালেন্স ডিলিট না হয়ে যায়।

উপরোক্ত ঘটনা দুইটি আপাত দৃষ্টিতে অসম্ভব মনে হলেও এটাই এখন প্রতারণার নতুন কৌশল যার নাম ‘স্পুফিং-Spoofing’! এই কৌশলে সফটওয়ারের মাধ্যমে কলার নিজের নাম্বার হাইড করে তার স্থলে কলারের ইচ্ছে মত নাম্বার প্রদর্শন করে রিসিভারের মোবাইলে। এরকমই একটি সফটওয়ারের নাম ‘Caller ID Spoofer’ যা ইন্সটল করতে হয় কলারের মোবাইলে, তারপর এর মাধ্যমে কল করার সময় কলার নাম্বার হিসাবে প্রদর্শনের অপশনে যে নাম্বার দেয়া হবে রিসিভারের মোবাইলে কলারের প্রকৃত নাম্বারের বদলে ঐ ফেক নাম্বার প্রদর্শিত হবে কলার হিসেবে।

ফান সফটওয়্যার হিসেবে পরিচিত স্পুফিং সফটওয়্যার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রিয়জনকে চমকে দিতে ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে এটা ব্যবহার করে বিভিন্ন ব্যক্তির মোবাইল নম্বর নকল করে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের হুমকি দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সম্প্রতি স্পুফিং কল কীভাবে করা যায় তা সাংবাদিকদের সামনে করে দেখান ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম।
জানা গেছে, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের নম্বর স্পুফিং করে কয়েকদিন আগে এক জায়গায় ফোন করে তদবির করা হয়। শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু এবং তার এপিএসও একই ঘটনার শিকার হন। তাদের মোবাইল নম্বর স্পুফিং করে করিমগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে কল করে বিভিন্ন তদবির করে একটি চক্র। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তাও এ ধরনের প্রতারণার শিকার হয়েছেন। তিনি বিষয়টি শেরে বাংলা নগর থানায় জিডি করলে পুলিশ একজনকে গ্রেফতার করে। গত আগস্ট মাসে পুলিশের আইজি শহীদুল হকের মোবাইল নম্বর স্পুফিং করে ডিএমপির এক ওসিকে ফোন করে প্রতারণার মামলার এক আসামিকে ছাড়িয়ে নেয়া হয়।

স্পুফিং করতে প্রথমে বিদেশি প্রভাইডারের কাছ থেকে সার্ভার ও আই-টেল মোবাইল ডায়েলার অ্যাপ কিনে নেয় প্রতারকেরা। বাড়তি টাকা দিয়ে আই-টেলের নাম বদলে রাখে ‘ইয়েস কার্ড’। অ্যাপটি ইনস্টল করে মোবাইল ও কম্পিউটারে। অ্যাপটি নিয়ন্ত্রণ হয় কম্পিউটার থেকে। আর একে বলে বিলিং ম্যানেজার।

স্পুফিং করতে চাওয়ার নম্বরটির বিপরীতে ডলারে কিনে নেয় ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড কথা বলতে মিনিট। পরে মোবাইলে ইনস্টল অ্যাপে আইডি-পাসওয়ার্ড দিয়ে স্পুফ করে প্রতারকরা। বিদেশি সার্ভার হয়ে বাংলাদেশের গেটওয়ে দিয়ে কাঙ্খিত ব্যক্তির কাছে চলে যায় ফোন।

প্রতিকারের উপায়:
কেউ এ ধরনের ফোন পেলে সঙ্গে সঙ্গে ওই নম্বরে ফিরতি কল করবেন এবং কলার প্রকৃত মালিক কি না নিশ্চিত হবেন।
আর বিটিআরসি জানাচ্ছে স্পুফিং বন্ধে সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করে এমন সংগঠন ও অপারেট প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠন হয়েছে কমিটি। পাশাপাশি পরিচিত কারো নামে সন্দেহজনক কল পেলে ফিরতি ফোনে নিশ্চিত হওয়ার পরামর্শও দিচ্ছে বিটিআরসি।
এধরনের প্রতারণার হাত থেকে বাঁচতে হলে অস্বাভাবিক যে কোন কলের ক্ষেত্রে ঐ নাম্বারে কল ব্যাক করাই নিশ্চিত হওয়ার সহজতম উপায় কারণ কল ব্যাক করলে তা প্রতারকের কাছে না গিয়ে প্রকৃত নাম্বারেই যাবে।

৩ Comments on "মোবাইলে প্রতারণার নতুন কৌশল ‘স্পুফিং-Spoofing’"

মন্তব্য করুন

×
কপিরাইট © ২০০৬-২০২৪ সমকাল দর্পণ. সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
সার্বিক তত্ত্বাবধানে রয়েল টেকনোলজিস