থ্যালাসীমিয়া
থ্যালাসীমিয়া শব্দের সাথে বেশীর ভাগ মানুষই পরিচিত নয়। থ্যালাসীমিয়া শব্দটা আমি শুনেছি বছর কয়েক আগে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের ‘আজীবন রক্তদাতার সম্মাননা স্মারক’ অনুষ্ঠানে। আর বিস্তারিত জানলাম কিছুদিন আগে একজনকে রক্তদান (এবি+) করতে গিয়ে। যাকে রক্ত দিলাম সেই ছেলেটির বয়স ১৫ বছর, নাম সজিব। জন্মের কয়েক মাস পরে তার থ্যালাসীমিয়া ধরা পরে। সেই থেকে শুরু। নিয়মিত (আগে মাসে একাধিকবার হলেও এখন মাসে একবার) রক্ত গ্রহন করতে হয়। যা তার বেঁচে থাকার একমাত্র উপায়। কোন মাসে রক্তের ব্যবস্থা না হলে পরিবারের অবস্থা কি হতে পারে একবার চিন্তা করে দেখুন।
আমার মোবাইল নম্বরটি (আরো অনেকের নম্বর প্রিন্ট করা দেখলাম) উনারা পেয়েছেন ইন্টারনেট থেকে। নম্বর পেয়েই মোবাইল করেছেন। যেহেতু আমি নিয়মিত রক্তদান করে থাকি তাই উনাদেরকে রক্তদান করতে কোন দ্বিধা না করেই গেলাম।
থ্যালাসীমিয়া সম্পর্কে খুব বেশী তথ্য আমি খুঁজে পেলাম না। বাংলাদেশ থ্যালাসীমিয়া হাসপাতাল থেকে আনা প্রচারপত্র অনান্য যায়গায় থেকে কিছু তথ্য সগ্রহ করে আমার ছোট জ্ঞানে কিছু তথ্য তুলে ধরলাম।
থ্যালাসীমিয়া (Thalassemia) একটি ভয়াবহ ঘাতক ব্যাধি। এই রোগে রক্তে অক্সিজেন পরিবহনকারী হিমোগ্লোবিন কণার উৎপাদন কম হয় ফলে রোগী রক্তে অক্সিজেনস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়াতে ভুগে থাকেন (রক্তশুণ্যতা)। অ্যানিমিয়ার ফলে অবসাদগ্রস্ততা থেকে শুরু করে অঙ্গহানি ঘটতে পারে। থ্যালাসেমিয়া দুইটি প্রধান ধরনের হতে পারে: আলফা থ্যালাসেমিয়া ও বেটা থ্যালাসেমিয়া। সাধারণভাবে আলফা থ্যালাসেমিয়া বেটা থ্যালাসেমিয়া থেকে কম তীব্র। আলফা থ্যালাসেমিয়াবিশিষ্ট ব্যক্তির ক্ষেত্রে রোগের উপসর্গ মৃদু বা মাঝারি প্রকৃতির হয়। অন্যদিকে বেটা থ্যালাসেমিয়ার ক্ষেত্রে রোগের তীব্রতা বা প্রকোপ অনেক বেশি; এক-দুই বছরের শিশুর ক্ষেত্রে ঠিকমত চিকিৎসা না করলে এটি শিশুর মৃত্যুর কারণ হতে পারে। অনিরাময়যোগ্য এই রোগের ওষুধ এখনো আবিস্কার হয় নি। তবে রোগীর বোনম্যারো ট্রান্সপ্লানটেশন করলে রোগী ভালো হবার সম্ভাবনা থাকে। রোগীকে নিয়মিত রক্ত গ্রহনই বেঁচে থাকার একমাত্র চিকিৎসা।
এক নজরে থ্যালাসীমিয়া
• থ্যালাসীমিয়া একটি বংশগত রক্ত রোগ।
• বাবা-মা উভয়ের এই রোগের জীন বহন করলেই তাদের ছেলে মেয়েরা এই রোগ নিয়ে জন্ম গ্রহন করে থাকে।
• থ্যালাসীমিয়াতে আক্রান্ত হলে রক্তের লোহিত কণা দ্রুত ভেঙ্গে পরে ফলে রোগী রক্তশূন্যতা জনিত জটিলতার কারণে মৃত্যুবরণ করে।
থ্যালাসীমিয়া রোগের চিকিৎসা
• থ্যালাসীমিয়া রোগ নিরাময়যোগ্য নয়। এখন পর্যন্ত এই রোগের ওষুধ আবিস্কার হয় নি।
• থ্যালাসীমিয়া রোগীকে নিয়মিত রক্ত পরিসঞ্চালন করতে হয়।
• রক্ত পরিসঞ্চালনের ফলে রক্তের লৌহ হৃদযন্ত্রের এবং যকৃতে জমা হয় (Iron overload) ফলে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে রোগী মারা যায়। এই অতিরিক্ত লৌহ শরীর থেকে বের করার জন্য নিয়মিত (রক্ত গ্রহনের পরে) ওষুধ সেবন অপরিহার্য।
• তাছাড়া রোগীর বোনম্যারো ট্রান্সপ্লানটেশন করলে রোগী ভাল হবার সম্ভাবনা থাকে। তবে এই চিকিৎসা অত্যান্ত ব্যায়বহৃল এবং বাংলাদেশে তা সম্ভব নয়।
থ্যালাসীমিয়া রোগের প্রতিরোধ ব্যবস্থা
• থ্যালাসীমিয়ার প্রতিকার নেই, তাই প্রতিরোধই এ রোগের হাত থেকে বাঁচার একমাত্র উপায়।
• স্বামী-স্ত্রী উভয় থ্যালাসীমিয়া রোগের জীন বহন করলে সন্তানের থ্যালাসীমিয়া রোগ নিয়ে জন্ম গ্রহণ করতে পারে। তাই বিয়ের আগে উভয়ের রক্ত পরীক্ষা করা জরুরী। তবে একজন বাহক হলে সন্তানের থ্যালাসীমিয়া রোগ নিয়ে জন্ম গ্রহণ করার সম্ভাবনা খুবই খুবই কম।
থ্যালাসীমিয়া প্রতিরোধে প্রচার
• থ্যালাসীমিয়া সম্পর্কে জনসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।
• ‘বাংলাদেশ থ্যালাসীমিয়া হাসপাতাল’ (২৫এ-২৫বি, গ্রীন গার্ডেন টাওয়ার, লেভেল-৬, গ্রীন রোড, ঢাকা। ফোন: ৯৬৬২২৩৯, ০১৭১৬৩১৭৮৫৭, ০১৮১৯৮৪৪৩৭৩, ০১৯১১৫৬৯৪১০, ০১৭১৬১৪৭৩৮৪) নামে একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল স্থাপন করা হয়েছে এই রোগের চিকিৎসার জন্য। এছাড়াও অনান্য সকল হাসপাতালেই থ্যালাসীমিয়া রোগের চিকিৎসা হয়।
** বাংলাদেশে প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ লোক এই রোগের জীন বহন করে।
ধন্যবাদ আপনাকে থ্যালাসেমিয়া সম্পর্কে একটা দরকারী পোস্ট করার জন্য। বাংলাদেশে থ্যালাসেমিয়া রোগীর সংখ্যা নেহায়েত কম না। যে বা যিনি এই রোগে ভোগেন, সে বা তিনি কোন ভাবেই এর জন্য দায়ী নন। রোগটি এমনই। জন্মগত। আসুন আমরা সচেতন হই। থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধে এগিয়ে আসি। বিষয়টি যদিও খুব সহজ না। কারণ, বিয়ের সময় পাত্র-পাত্রীর অন্য সব যোগ্যতা, দোষ-গুন যাচাই করলেও এই ব্যপারে আমাদের সমাজে এখনো ব্যাপক সচেতনা গড়ে ওঠেনি। তাই শিক্ষিত পরিবারের মধ্যে বিয়ে হলেও এসব কেউ চিন্তা করেন না, পরীক্ষাও করেন না। আর হ্যা নিকটাত্মীয়ের মধ্যে বিয়ে হলে থ্যলাসেমিয়ায় আক্রান্ত শিশু জন্মের সম্ভাবনা থাকে বেশী। এসব ক্ষেত্রে সময়মত চিকিৎসা না পেলে জন্মের পরপরই অনেক সময় শিশুর মৃত্যু ঘটে।
খুব ভালও লিখেছো
ধন্যবাদ অমি ভাই।