টানা অবরোধের কারণে আমরা কোথাও বেড়াতে যেতে পারিনি বেশ কিছু দিন। ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৫তে প্রাইম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম রি-ইউনিয়নে অনেকের সাথে অনেকদিন পরে দেখা হলো। এমনই এক আনন্দঘন মূহুর্তে নরসিংদীর ছেলে জাহিদুল ইসলাম সোহেল তার বিবাহের সুসংবাদ এবং দাওয়াত দিলো। অনুষ্ঠান শেষে ফেরার সময় আমি (এসএম মেহেদী আকরাম), খন্দকার হাসানুজ্জামান হাসান, গোলাম সারোয়ার নাফি, আবু সাঈদ, দেওয়ান ইমরাম সিপন, আনিসুর রহমান তুহিন, সাইফুল ইসলাম তিলকিস সিদ্ধান্ত নিলাম আমরা হাসানের মাইক্রোতে ২০ ফেব্রুয়ারী নরসিংদী যাবো এবং ২১ তারিখে ঢাকায় ফিরবো যদিও দাওয়াত ছিলো ১৯-২১ তারিখ তিনদিন।
১৯ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত আমরা চারজন (আমি, হাসান, নাফি এবং সাঈদ) নিশ্চিত হলাম। বাকীরা তাদের বিভিন্ন ব্যাক্তিগত গুরুত্বপূর্ণ কাজে আটকা পরে আমাদের সাথে যেতে পারলো না। তাদেরকে অবশ্য সাঈদের বকা থেকে আমরা রক্ষা করতে পারলাম না। ২০ তারিখ ভোর ৬টায় আমরা রওনা হলাম নরসিংদীর পথে, গুরুত্বের সাথে বলে রাখা ভাল আমাদের গাড়ির এবার ড্রাইভার হাসান সয়ং আর হেল্পার হিসাবে আমি, ইতিপূর্বে অনান্য সকল ট্যুরে গাড়ির স্থায়ী ড্রাইভার ছিলো এবং হাসান হেল্পার ছিলো। হাসানের ড্রাইভারীতে আমি তেমন চিন্তা করছিলাম না কারণ নিজের গাড়ি একটু ধীরে-সুস্থ্যেরই চালাবে, এছাড়াও বউ-মেয়ে নিয়ে ইতিপূর্বে নারায়নগঞ্জ এবং গাজীপুরে গিয়েছে। আমি, হাসান এবং নাফি মিরপুর-১ থেকে রওনা হয়ে টংগী স্টেশন রোড থেকে সাঈদকে তুলে নরসিংদীর দিকে চললাম। নরসিংদী পর্যন্ত রাস্তা ভাল থাকলেও এরপরে আকাঁবাকাঁ বা খানা-খন্দের পথে অতি সাবধানে এবং ধীরে আমরা বেলা ১১টার সময় সোহেলের বাড়িতে (মনহরদি থানার আকানগর গ্রামে) পৌছালাম। এরপরে নাস্তা করে খালাআম্মার হাতের পিঠা খেয়ে আমরা পুকুরে গেলাম মাছ ধরতে বড়শি এবং জাল নিয়ে। সাঈদ বড়শি আর আমি জাল ফেললাম। ছবি তোলার দায়িক্তে নাফি আর মাছ কুঁড়ানোর দায়িক্তে হাসান। জুম্মার নামজের জন্য সময় কম থাকেতে অল্প সময়ে সাঈদ ১টি মাছ তুললো বড়শিতে আর আমি কয়েকবার জাল ফেলে কয়েকটা মাছ ধরলাম। এরপরে গোসল সেরে নামাজ পড়ে এসে আমরা ক্ষেতে গেলাম পাকা টমেটো খেতে। বেশ কিছু পাকা টমেটো তুলে খেলাম সবাই। এছাড়াও বড়ই পেড়ে খেলাম গাছ থেকে। ক্ষেত থেকে তোলা টমেটো আর ঢাকার বাজার থেকে কেনা টমেটোর স্বাদ আকাশ-পাতাল পার্থক্য আর বড়ইও খুবই সুস্বাদু।
বেলা তিনটায় আমরা বরযাত্রা গেলাম। বিয়ে বাড়িতে খাবার পরে বরের হাত ধোবার সময় আমরা শর্ত দিলাম বরে সাথিদেরও (বরের সাথে আরো যে ৫জন বসে খেয়েছে) হাত ধোয়াতে হবে তা না হলে বরের হাত আমরা ধুতে দিবো না। অনেক বাক-বিতর্ক শেষে আমরা ছাড় দিয়ে বললাম সবাইকে না হলেও অন্তত হাসান এবং বরের ছোট ভাই রুবেলের হাত ধোয়াতে হবে। কনেপক্ষ আমাদের শর্তে রাজি না হওয়াতে বরের হাত ধোয়াতে পারলো না এবং হাসান নিজেই বরের হাত ধুয়ে দিলো।
রাতে সোহেলের বাড়িতে এসে পরিকল্পনা করলাম কাল ‘ওয়ারী বটেশ্বর’ বেড়াতে যাবো। www.narsingdi.gov.bd/node/39021 এবং অনান্য ওয়েবসাইট ঘেটে ‘ওয়ারী বটেশ্বর’ ছাড়া আর তেমন কোন ভাল দর্শনীয় স্থান পেলাম না।
পরের দিন (২১ ফেব্রুয়ারী) সকালে নাস্তা সেরে স্থানীয় চারজনকে নিয়ে আমরা রওয়া হলাম ‘ওয়ারী বটেশ্বর’ এর উদ্দ্যেশ্যে। ২৫ মিনিট গাড়িতে চলার পরে আমরা ‘ওয়ারী বটেশ্বর’ পৌছালাম তারপরে যা দেখলাম তা দেখে আমরাতো কিংকর্তব্যবিমূঢ়। চারিদিকে বাঁশ আর বাঁশ মানে বাঁশবাগান আর কয়েকটা সাইনবোর্ড। মূলত যে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন করা হয়েছিলো তা সংরক্ষণের সুবিধার্থে তা মাটি দিয় ঢেকে রাখা হয়েছে। এহেন বাঁশ খাবার পরে হাসান আর সাঈদতো অনেক চিল্লা-পাল্লা করলো এবং জীবনের প্রথমবার এত বড় বাঁশ খাবার স্মৃতি রক্ষার্থে বাঁশবাগানে কিছু ছবি উঠলাম। এরই মাঝে আমাদের মত আরেক দল এসেছে ‘ওয়ারী বটেশ্বর’ দেখতে। তাদের দেখে আমার দু:খ কিছুটা কমলো বিশেষ করে হাসানতো মজা খুশি। সে কি হাসি সবার। হো হো হো…
এরপরে আমরা আকানগরে এসে ক্রিকেট ম্যাচ খেললাম, বিয়ে বাড়ি বনাম অবশিষ্ট একাদশ। এবার সবজি তোলার পালা। আমরা লাউ, টমেটো, বেল, লেবু, বড়ই পারলাম এবং আমি ও হাসান গেলাম মাছ ধরতে। কয়েকবার জাল ফেলে এক বালতি মাছ ধরলাম আমরা দুজনে। বলে রাখা ভাল পুকুরের এক যায়গাতে মাছের খাদ্য দিয়ে রেখেছিলাম। দুপুরে খাবার পরে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সোহেলের চাচাতো বোন এবং ভগ্নিপতি সহ আমরা ছয়জন ঢাকার পথে রওনা দিলাম। আসার সময় আমাদের তোলা ফল, সবজি, মাছ এবং খালাআম্মার হাতে বানাতো পিঠা নিয়ে আসলাম।
ইট-পাথরের ঢাকা ছেড়ে প্রকৃতির কাছাকাছি গিয়ে আমরা বেশ মজা করেছি এই দু’দিনে। আর খালাআম্মাকে বেশ বিরক্ত করেছি। সব মিলিয়ে বাঁশবাগান ছাড়া বাকী সবাই খুবই মধুর ছিলো।