প্রযুক্তিতে ২০০৭ সালের হতাশা

স্বীকৃত বিভিন্ন কোম্পানীর কাছে প্রযুক্তি ব্যবহারকারীদের থাকে বিভিন্ন প্রত্যাশা। আর নতুন বছরের শুরুতে বিভিন্ন গণমাধ্যম প্রযুক্তিপ্রেমীদের এসব প্রত্যাশার একটা খসড়াও জরিপ করে প্রকাশ করে। তবে প্রত্যাশার চেয়ে প্রাপ্তি কম হলেই তৈরী হয় হতাশার। গত বছরে (২০০৭ সালে) প্রযুক্তি প্রেমীদের হতাশ করেছে এমন কিছু প্রযুক্তি জড়িপ করে তা তালিকা প্রকাশ করেছে পিসি ওয়ার্ল্ড। এগুলোর মধ্যে প্রথমেই রয়েছে অপারেটিং সিস্টেমের একচেটিয়া বাজার মাইক্রোসফটের উইন্ডোজের নতুন সংস্করণ উইন্ডোজ ভিসতা।
#১. মাইক্রোসফট উইন্ডোজ ভিসতা: অপারেটিং সিস্টেমের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হচ্ছে মাইক্রোসফটের উইন্ডোজ। ২০০২ সালে উইন্ডোজ এক্সপি বাজারে আসে এর দীর্ঘ ৫ বছর পরে বাজারে আসে বহুল প্রত্যাশিত উইন্ডোজ ভিসতা। কিন্তু অতি প্রত্যাশার তুলনাই প্রাপ্তি ছিলো সামান্যই, ফলে পুরোটাই হতাশার মত ফুটে ওঠে উইন্ডোজ প্রেমীদের কাছে। মূলত অতিরিক্ত হার্ডওয়্যার প্রয়োজন হওয়াতে বেশীরভাগ ব্যবহারকারী ভিসতা ব্যবহারের সুযোগ পাইনি। ভিসতার ইন্টিগ্রেটেড সিকিউরিটি এবং প্যারেন্টাল কন্ট্রোল খুবই চমৎকার। এর সার্চিং এবং তারহীন নেটওয়ার্ক খুবই দ্রুত এবং সহজতর। তবে ভিসতা পূর্বের অপারেটিং সিস্টেম এক্সপির তুলনাই ধীরগতির। এ সবকিছূর ফলে বহু ব্যবহারকারী এক্সপি ছেড়ে ভিসতা ব্যবহারে আগ্রহী হয়নি।
#২. ফরম্যাটের প্রতিযোগীতা (হাই-ডেফিনেশন/এইচডি): প্রথমে সিডি এরপরে ডিভিডি বাজার মাত করেছে কিন্তু এর উত্তরসূরি হিসাবে কোন ফরম্যাটই এবছরে বাজারে আসতে পারেনি। বছরের (২০০৭) শুরুতেই হাই-ডেফিনেশন বা এইচডি নিয়ে বেশ সরগরম ছিলো কিন্তু ফলাফল ছিলো পুরোটাই শুন্য। ফেব্রুয়ারীতে সনি ব্লু-রে ফরম্যাটের ঘোষণা দেয় এরপরে এপ্রিলে তোশিবা ঘোষণা দিলো এইচডি-ডিভিডি যা প্রথমেই ১,০০,০০০ ইউনিট বিক্রি করছে। জুলাই মাসে ব্লকব্লাষ্টার ভিডিও জানায় তারা ব্লু-রে ডিক্স ব্যবহার করবে এমনকি তারা ১৪০০ এর বেশী খুচরা বিক্রিও করে। আগষ্টে প্যারামাউন্ট এবং ড্রিমওয়ার্ক সমর্থন করে এইচডি-ডিভিডি এরপরে সেপ্টেম্বরে নতুন ফরমেট এইচডি-ভিএমডি (ভাসটাইল মাল্টিলেয়ার ডিক্স) এর কথা শোনা যায়। সব মিলিয়ে কোন ফরম্যাটই যেমন পূর্ণাঙ্গ রুপরেখা দাড় করাতে পারেনি তেমনই নির্দিষ্ট একটি ফরম্যাটের ব্যাপারে একমত হতে পারেনি ফলে ফলাফলের খাতাই শুন্যই রয়ে গেল। এখন দেখার বিষয় ২০০৮ সালে কোন ফরমেট বাজারে মাত করতে পারে!
#৩. এন্টি-সোসাল নেটওয়ার্ক (ফেসবুক বেকন): সোসাল নেটওয়ার্ক হিসাবে মাইস্পেস বেশ জনপ্রিয়। কিন্তু ফেসবুক এবছরে মাইস্পেস থেকে বিভিন্ন তথ্য চুরি বা অনুলিপি করে এন্টি-সোসাল নেটওয়ার্ক তৈরী করতে সক্ষম হয়েছে। ফেসবুকে ঢুকলে দেখা যাবে বিভিন্ন তৃতীয় পক্ষের উদ্দীপ্তকরণ বিজ্ঞাপনের ছড়াছড়ি। কিছুদিন পরে এই সাইট থেকে পাওয়া যাবে বিরক্তিকর স্প্যাম। সবমিলিয়ে প্রতারনামূলক হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে এই সাইটটি।
#৪. ইয়াহু!: সবচেয়ে জনপ্রিয় ইমেইল সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানটি এই বছরে তেমন উন্নত কিছু দিতে পারেনি। তারা এবছরে ইমেইল গ্রাহকদের আনলিমিটেড (অসীম) যায়গা দিয়েছে এবং আপডেট করেছে মেইলকে। বন্ধ করেছে ইয়াহুর নিজস্ব ফটো সেবা। তবে সবমিলিয়ে গুগলের সাথে পাল্লা দিয়ে পেয়েও উঠতে পারেনি ইয়াহু!। তবে ইয়াহু!র সিইও টেরি সীমল বলেছেন শিগগিরই ২৩০ মিলিয়ন ডলারের প্যাকেজ আসবে ইয়াহু!র উন্নয়নের জন্য।
৫. অপলের আইফোন: আইপডের পরে আইফোনও বাজার মাত করেছে বলা যায় কিন্তু আইফোনে কাছে প্রত্যাশা ছিলো আরো বেশী। সম্পূর্ণ টাসস্ক্রিন এই ফোন প্রথমে এটিএন্ডটির মাধমে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আসে ফলে লম্বা লাইন দিয়ে কিনতে হয় ক্রেতাদের। এটিএন্ডটি অপারেটরের সাথে চুক্তিবদ্ধ লক করা আইফোর অন্য অপারেটরে ব্যবহারের সুযোগ ছিলো না। অথচ এটিএন্ডটি ব্রডব্যান্ড সেবা উন্নত না হওয়াতে হতাশায় পরে ব্যবহারকারীরা। ফলে শুরু হয় আনলক করার প্রয়াস, যা সফলও হয় অনেকে। যদিও কিছু আইফোন অনলাইনে ৬০০ ডলারে আনলক অবস্থায় বিক্রি করে অপল। এছাড়াও আইফোনে নেই বেশকিছু সাধারণ সুবিধা।
#৬.আন-নিউট্রাল (ব্রডব্যান্ড ইন্ডাসট্রি): যুক্তরাষ্ট্রের এইসব আইএসপি প্রতিষ্ঠান থেকে মাসিক ৪০-৬০ ডলার খরচ করে আনলিমিটেড ব্রডব্রান্ড সংযোগ পাওয়া যেত যা মূলত আনলিমিটেড ছিলো না বলে প্রশ্ন উঠেছে। এসকল (কমকষ্ট, কক্স, কিউয়েষ্ট, ক্যাবেলভিশন, চার্টার ইত্যাদি যাদেরকে যুক্তরাষ্ট্রের অসাধু আইএসপি বলে উল্লেখ করেছে www.azureuswiki.com) প্রতিষ্ঠান বিট-টরেন্টের মত টরেন্ট সাইটগুলোকে হয়রানি করেছে। তবে প্রথমে কমকষ্ট বিট-টরেন্ট ব্যবহার করতে দেয়ার অনুমতি না দিলেও পরবর্তীতে অনুমতি দেয় কিন্তু ব্যবহারকারীদের ব্যান্ডউইথ কমিয়ে দিচ্ছে, ফলে গ্রাহকরা পর্যাপ্ত (আনলিমিটেড ব্রডব্রান্ড) সেবা পাচ্ছে না। যা ইন্টারনেট ব্যবহাকারীদের হতাশ করেছে।
#৭. ভোনাজ (ভিওআইপি): ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রোটোকল বা ভিওআইপি নিয়ে শোরগোল শোনা গেছে গত বছর জুড়েই। মূলত টেলিকম কোম্পানীগুলোর জন্য এই প্রযুক্তি মানুষের হাতে হাতে পৌছানো সম্ভব হয়নি। অনান্য দেশে সল্পমাত্রায় ভিওআইপি ব্যবহার শুরু হলেও বাংলাদেশে কোন নীতিমালা চুড়ান্ত না হওয়াতে অন্ধকারেই রয়েছে ভিওআইপি।
#৮. ল্যাপার্ড ১০.৫ (অপলের অপারেটিং সিসেটম): ল্যাপার্ড নামের অপলের এই অপারেটিং সিস্টেম ২০০৬ সালে ১০.৪ সংস্করণ বাজারে আসে। আর ২০০৭ সালে বাজারে আসে ১০.৫ সংস্করণ। নতুন সংস্করনের কাছে যে প্রত্যাশা থাকে তা দিতে সম্পূর্ণভাবে ব্যার্থ হয়েছে অপল। অনেকটা উইন্ডোজ ভিসতার মত ফ্লপ বলা যায়। নতুন সংস্করণ ল্যাপার্ড ১০.৫ এ নতুনত্ব তেমন কিছুই পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।
#৯. উইন্ডোজ অফিস ২০০৭: ভিসতার মত অফিস ২০০৭ ও হতাশ করেছে ব্যবহারকারীদের। উইন্ডোজ ভিসতা ব্যবহার করতে না পারলেও অফিস ২০০৭ ব্যবহার করতে পেরেছে এক্সপি ব্যবহারকারীরা যেন দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মত। কিন্তু ডকুমেন্টের নতুন ফরম্যাটের ফলে ব্যবহারকারী বেশ বিপাকে পড়তে হয় কারণ অফিসের পূর্ববর্তী সংস্করণে নতুন এই ফরম্যাট ওপেন করা যায় না। এছাড়াও টুলবার এবং মেনুর পরিবর্তে রিবন হওয়াতে কমান্ডগুলো খুঁজে আয়ত্বে আনতে বেশ বেগ পেতে হয়। তবে এক্সএমএল সমর্থন হওয়াতে বেশ সুবিধায় হয়েছে।
#১০ ওয়ারলেস ক্যারিয়ার: এছরে বেশ কিছু সেলফোন (অপলের আইফোন, এলজি, স্যামসাং, এইচটিসি এবং নোকিয়ার কিছু মোবাইল) বাজার মাত করেছে। যেন মোবাইল পিসির সুবিধা এসেছে হিপ পকেটে। কিন্তু ওয়ারলেস সার্ভিস প্রভাইডার তেমন কোন উন্নতিই করতে পারেনি। ভয়েস কলের মান আগের যায়গাতেই রয়েছে, হাই স্পিড নেটওয়ার্ক অনেকটা দুর্লভ এবং কলরেট কিছুটা কমলেও অনান্য পুশপুলের চার্জ ছিলো অসহনীয়। এব্যাপারে পিসি ওয়ার্ল্ডের এক্সিকিউটিভ সম্পাদক এবং ডিজিটাল হোম অনলাইন (www.digitalhomeonline.com) এর টিপ ব্রাড গ্রিমিস বলেছেন ওয়ারলেস ইন্ডাসট্রি অত্যন্ত নিরাশ করেছে।
সবমিলিয়ে ২০০৭ সালে প্রযুক্তিপ্রেমীরা যেমন নতুন নতুন প্রযুক্তির স্বাদ পেয়েছে তেমনই অতি প্রত্যাশার কারনে হতাশও হয়েছে বলা যায়।

মন্তব্য করুন

×
কপিরাইট © ২০০৬-২০২৪ সমকাল দর্পণ. সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
সার্বিক তত্ত্বাবধানে রয়েল টেকনোলজিস